আখ চাষের সময়কাল

 

আখ বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল। আখ চাষ করতে আখ চাষের সময়কাল জানতে হবে। আখ চাষের সময়কাল জানা না থাকলে আখ চাষে আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। আখ চাষের জন্য বাংলাদেশ বেশ প্রসিদ্ধ। আজকে আমরা আখ চাষের সময়কাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
আখ চাষের সময়কাল
আখ বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল গুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে আখ চাষের ভূমিকা অনেক।

সূচিপত্রঃ- আখ চাষের সময়কাল

ভুমিকাঃ

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অর্থকরী ফসল গুলোর মধ্যে অন্যতম আখ। আমরা যে সকল তিনি ব্যবহার করি সে সকল চিনি প্রধানত আখ থেকে আসে। কিন্তু বর্তমানে চিনির চাহিদার তুলনায় আখ চাষের উৎপাদন অনেক কম। আকাশের উৎপাদন কম হওয়ার পেছনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। যেমন- সঠিক পরিচর্যা করতে না পারা বা চাষাবাদের সঠিক পরিকল্পনার অভাব, বিভিন্ন ফসলের বৈচিত্র্য, বিভিন্ন মেয়াদী সবজি ফসলের আবাদ বৃদ্ধির ফলের বাগান তৈরী ইত্যাদি কারণে দিন দিন আখ চাষের জমি কমে যাচ্ছে। আখের রস শরীরের জন্য বেশ উপকারী।

শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য আপনি আখের রস খেতে পারেন। এছাড়াও আখে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। যেমন- প্রতি ১০০ গ্রাম আখের রসে ৩৯ ক্যালরি, ৯.১ গ্রাম শর্করা, আমিষ চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ পাশাপাশি রিবোফ্লোবিন এবং ক্যারোটিন বিদ্যমান। পরিপক্ক আখে শতকরা ৮০ ভাগ পানি, ৮-১৬ ভাগ সুক্রোজ, ০.৫-২ ভাগ রিডিউসিং সুগার এবং ০.৫-১ নন সুগার থাকে।

আখ চাষের সময়কালঃ

আখ চাষের জন্য সঠিক সময় হল অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত। তবে এই সময়ের মধ্যে চারা রোপণের উত্তম সময় হলো সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত। চারা রোপণের জন্য প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার কাটিং আখ বা সেট বীজ প্রয়োজন হতে পারে।

আখ চাষের পদ্ধতিঃ

আখ চাষের সময়কালে কিভাবে এবং কি পদ্ধতিতে আখ চাষ করতে হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
মাটি ও জলবায়ুঃ আখ চাষের ক্ষেত্রে মাটি এবং জলবায়ুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আখ চাষের জন্য সবচাইতে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু ভালো। গরম আবহাওয়া এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় আখ চাষ ফলপ্রসু হয় না।
আখ চাষের জমি নির্বাচনঃ আখ চাষের সময়কালে আখ চাষের জন্য ভালো ফলাফল পেতে হলে বা ফলন পেতে হলে জমি নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক জমি নির্বাচন করতে না পারলে আখ চাষে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আখ চাষের জন্য সাধারণত উঁচু এবং সমতল জমির প্রয়োজন হয়। সেই সাথে পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিচু বা ডোবা জমি আখ চাষের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত।
মাটি নির্বাচনঃ আগ চাষের সময় কাল এ আখ চাষ করতে মাটি নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। সকল মাটিতে আখ চাষ এর ফলন ভালো হয় না। আখ চাষের জন্য উঁচু এবং সমতল জমির প্রয়োজন। এবং পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা সহ আখ চাষের জমির মাটি এঁটেল, দোআঁশ ও এঁটেল-দোআঁশ মাটি উপযুক্ত।
জাত নির্বাচনঃ আখের অনেক জাত রয়েছে। সব জাতের আখ চাষ করলে ফলন ভালো পাওয়া যায় না। ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই ভালো জাত নির্বাচন করতে হবে। ভালো ফলন পেতে আপনারা ঈশ্বরদী ২/৫৪, ঈশ্বরদী ১৬, ২০, ৩২-৪০, বিএসআর আই আখ ৪১-৪৪ অমৃত ইত্যাদি যাদের আখ চাষ করতে পারেন। আখ চাষের সময়কালে আখ চাষ করে ভালো অর্থ উপার্জন করতে হলে অবশ্যই জাত নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
বীজ শোধনঃ যে কোন ধরনের ফসলের ক্ষেত্রে বীজ শোধন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই বীজের সাথে অনেক ধরনের রোগ জীবাণু থাকে যার ফলে চারা এবং ফসল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আখের বীজ বলতে ছোট ছোট আখের টুকরা কে বোঝানো হয়। কারণ আখের গাছ থেকে আখ জন্মগ্রহণ করে। তাই আখ চাষের সময়কালে জমিতে আখের বীজ বপনের পূর্বে অবশ্যই শোধন করে নিতে হবে। আখের বীজ শোধনের জন্য আপনারা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ব্যাভিস্টিন নামক এক ধরনের ওষুধের মাধ্যমে শোধন করতে পারেন।
বীজের হারঃ আখ চাষের জন্য বীজের হার নির্ণয় করাও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারনত এক একর জমিতে ২০-৪০ টন বীজের প্রয়োজন হতে পারে।
জমি তৈরিঃ আখ চাষের সময়কালে আকাশ করতে হলে জমি তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আখ চাষের সময়কালে ভালোভাবে জমি তৈরি করতে না পারলে আখ চাষে ভালো ফলন পাওয়া যায় না।
সেজন্য আখ চাষের জমি নির্বাচন করার পর জমিতে ভালোভাবে হাল চাষ করে ভালোভাবে মই দিয়ে নিতে হবে। জমির মাটি যেন খুব মিহি বা পাউডারের মত হয় সেই ভাবে মাটি তৈরি করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত নালা তৈরি করতে হবে। জমি তৈরি করা আখ চাষের সময়কালে আর চাষের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আখ একটি দীর্ঘমেয়াদী ফসল।
আর সাধারণত অনেক লম্বা হয়ে থাকে এবং এর শেকর হয়ে থাকে। তাই আখ চাষে জমি তৈরি করার সময় গভীরভাবে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়টি চাষ এবং মই দিলে ভালো হয়। এবং প্রতি একরে চার টন গোবর সার বা আবর্জনা সার দিলে ভালো।
সার প্রয়োগঃ আকাশের সময়কালে আখ চাষ করার জন্য এবং ভালো ফসল পেতে হলে হার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। বেশি ফলন পেতে হলে এক হেক্টর জমিতে ইউরিয়া সার দিতে হবে ১২০-১৫০ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ৮০-১১০ কেজি, এমওপি দিতে হবে ১১০-১৪০ কেজি, জিপসাম দিতে হবে ৫০-৬০ কেজি। এছাড়াও আপনি অধিক ফলন পাওয়ার জন্য ২-৩ টন জৈব সার প্রয়োগ করতে পারেন।
এ সকল সারের মধ্যে ইউরিয়া ও এমওপি সার ব্যতীত অন্য সকল সার জমি চাষ করার সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। নালা তৈরির সময় অর্ধেক পরিমাণ এমওপি সার ও ইউরিয়া নালায় প্রয়োগ করতে হবে। এবং বাকি অর্ধেক কুশি বের হওয়ার পর প্রয়োগ করতে হবে। সকল সার প্রয়োগের পরে প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে।
রোপণ পদ্ধতিঃ আখ চাষের সময়কালে আমাদের দেশের সাধারণত দুইভাবে আখ চারা রোপন করা হয়।
প্রচলিত পদ্ধতিঃ তিন চোখা আঁখ খণ্ড খন্ড করে কেটে নালার মধ্যে একই লাইনে গর্তের মধ্যে রেখে মাটি চাপা দিতে হয়। এছাড়াও খন্ড আক স্থাপনের জন্য ৫ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চি মাটি দিয়ে আখখন্ড ঢেকে দিতে হবে।
আধুনিক পদ্ধতিঃ এক বা দুই চোখ বিশিষ্ট আখ খন্ড খন্ড করে কেটে পলিব্যাগ কিংবা বীজতলায় আগে রোপণ করে চারা তৈরি করে নিতে পারেন। রোপনকৃত চারার বয়স একমাস হলে তারপরে জমিতে আবার রোপন করুন। এক্ষেত্রে ৩ ফুট বা ৯০ সেন্টিমিটার পরপর লাইন টেনে  ২ ফুট বা ৬০ সেন্টিমিটার পরপর চারা রোপন করুন।
আন্তঃপরিচর্যাঃ আখ চাষের সময়কালে আখ চাষ করার পরে আখের অন্ত পরিচর্যা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আঁকগুলো অনেক লম্বা হয় সেহেতু আঁকগুলো যেন পড়ে না যায় সেজন্য কয়েকটি করে আখগাছ একসাথে মিলিয়ে বেধে দিতে হবে। গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে এমনিতেই ঝরে পড়ে না সেক্ষেত্রে এদেরকে ছেড়ে ফেলতে হবে কিংবা কেটে দিতে হবে। আঁখ গাছের গোড়ার মাটিতে আলো বাতাস প্রবেশের জন্য গড়া ফাঁকা করে বা মাটি আলগা করে দিতে পারেন।

পোকামাকড় ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাঃ

আখ চাষের সময়কালে জমিতে আখের চারা রোপন করার পর পোকামাকড় ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এজন্য সঠিক সময়ে সঠিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। আখ চাষের চারা ডগার মাজরা পোকা নির্মূল করার জন্য কার্বোফুরান গ্রুপের কীটনাশক ফুরাডান ৫ জি কিংবা কুরাটার ৫ জি প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
কাণ্ডের মাত্রা পোকা দমনের জন্য কারটাপ গ্রুপের রাজেক্স ৪ জি এবং গোড়ার মাজরা পোকা দমনের জন্য ক্লোরোপাইরিফস গ্রুপের লরসবান ১৫ জি ব্যবহার করতে পারেন। আখ চাষের চারা বা আখের গোড়া নষ্ট করার জন্য উইপোকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ফসলের জন্য বেশ ক্ষতিকর। উইপোকা দমনের জন্য ক্লোরোপাইরিফস গ্রুপের ডারসবান জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারেন। আখ চাষের জমিতে উইপোকার টিভি দেখা দিলে সেগুলো ভেঙ্গে দিন। কিংবা ভিটাশিল্ড/লিথাল ২০ ইসি প্রয়োগ করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ 

আখ চাষের সময়কালে আখ চাষ করার পর আখ পরিপক্ক হতে প্রায় ১২-১৫ মাস সময় লাগে। আগ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ধারালো কোদাল বা কাচতে দিয়ে আখের গোড়া থেকে কাটা উচিত।

ফলনঃ 

আখ চাষের সময়কালে আখ চাষ করার পর হেক্টর প্রতি আখের গড় ফলন প্রায় ৪০-৬৫ টন।

উপসংহারঃ

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আখ চাষের সময়কাল আখ চাষ করার বিভিন্ন পদ্ধতি, রোগ বালাই দমন, পরিচর্যা, সার প্রয়োগ ইত্যাদি সম্পর্কে জানলাম। আখ চাষের সময়কাল, আখ চাষের পদ্ধতি, এবং পরিচর্যা জানার পরে সে অনুযায়ী আপনারা আখ চাষ করলে আশা করা যায় ভালো ফলন পাবেন। 25790

Share This Post

Next Post Next Post
No Comments
Click Here For Post A comment

Articulate Avenue privacy Policy; check your comments

comment url