হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ

 

হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ এ বিষয়ে অনেকে জানতে চান। হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ এ বিষয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব। হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ এ বিষয়ে ধারণা পেলে আপনারা এ রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারবেন।
হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ
হেপাটাইটিস বি রোগ হলে তা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়। চলুন তাহলে জেনে নেই হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ নাকি ছোঁয়াচে নয়।

পোস্ট সূচিপত্র: হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ

ভূমিকা

হেপাটাইটিস বি একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এটি লিভারকে আক্রান্ত করে এবং লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। প্রথম অবস্থায় এ রোগের লক্ষণ তেমন প্রকাশ পায় না। মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, প্রস্রাব এবং শরীরের রং হলুদ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এই রোগ সংক্রমণের পর তিন থেকে চার মাস সময় লাগে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে।
যেসব রোগীদের দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি হয় তাদের এই রোগ আস্তে আস্তে লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সারের দিকে রূপ নেই। জন্মগতভাবে যাদের শরীরে এই ভাইরাস থাকে তাদের দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বি এর সংক্রমণ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করে। হেপাটাইটিস বি সম্পর্কে কেউ বলে এটি ছোঁয়াচে আবার কেউ বলে ছোঁয়াচে নয়। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত এবং শরীর থেকে নিঃসৃত তরলের মাধ্যমে এই রোগটি ছড়ায়। হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ নাকি ছোঁয়াচে নয় এ বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করব। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ

হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ এ বিষয়ে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। এখন আমি হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ নাকি ছোঁয়াচে রোগ নয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরব। সাধারণত হেপাটাইটিস বি বিভিন্ন তরল যেমন রক্ত লালা ও বীর্যের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। রক্তে অবস্থিত ভাইরাস এবং শরীরের অ্যান্টিবডি এর মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা হয়।
  • সাধারণত হাঁচি কাশি ও স্তন পানের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় না। কিন্তু রক্ত ও শরীরের অন্যান্য তরলের মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে থাকে। তাই এই রোগটি অনেক সময় ছোঁয়াচে বলা হয়। এ ভাইরাসটি রোগীর লালায় থাকতে পারে কিন্তু খাবার বাসনপত্রের মাধ্যমে ছড়ায় না। কোন রোগী আক্রান্ত হলে লক্ষণ দ্রুত প্রকাশ পায় না এবং লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রোগী মারা যেতে পারে।
  • রোগীর শরীরে ভাইরাস স্থায়ী হওয়ার পরেও তা অন্যের শরীরে ছড়াতে পারে এবং বাইরের পরিবেশে ভাইরাসটি এক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে। কিভাবে এই রোগটি ছড়াতে পারে তার লক্ষণগুলো নিচে দেওয়া হল।
  • সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত অন্যের শরীরে ট্রান্সফার করার মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে রোগটি ছড়াতে পারে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সূচ যদি অন্য কেউ ব্যবহার করে তাহলে ছড়াতে পারে।
  • যদি কোন গর্ভবতী মা সংক্রমিত হয় তাহলে তার গর্ভের সন্তানও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত রেজর যদি অন্য কেউ ব্যবহার করে তাহলে তার এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • যারা মাদক সেবন করে তারা এক সিরিঞ্জ অনেকজন ব্যবহার করে। এর ফলে এই রোগ সংক্রমিত হতে পারে।
  • শরীরে অনেকে ট্যাটু করে থাকেন। ট্যাটু এবং আকুপাংচারের মাধ্যমে এই রোগটি ছড়াতে পারে।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে বসবাস এবং যে সকল স্থানে এ রোগের সংক্রমণ বেশি সেই স্থানে ভ্রমণ করলে এ রোগ ছড়াতে পারে।
  • রক্ত আদান প্রদান এবং ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে এ রোগটি ছড়াতে পারে।
এভাবে একজন আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে অন্য একজন ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে। এভাবেই রক্তে আস্তে আস্তে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ নাকি ছোঁয়াচে নয়।

হেপাটাইটিস বি কি ভালো হয়

স্থায়ী হেপাটাইটিস বি হলে তা সম্পূর্ণরূপে ভালো হতে একটু সময় লাগে। সাধারণত এই রোগের চিকিৎসা দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হল মুখে খাওয়ার ঔষধ এবং একটি ইনজেকশন। মুখে খাওয়ার ঔষধ গুলো ছয় মাস থেকে এক বছর মেয়াদে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেওয়া হয়। এরপর চিকিৎসকেরা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগীকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এভাবে অনেকে হেপাটাইটিস বি নেগেটিভ হয়ে যান এবং ভালো হয়ে যান।
আর যদি কেউ নেগেটিভ না হয় তাহলে চিকিৎসকরা তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আক্রান্ত রোগীরা যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকেন তাহলে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু যদি আক্রান্ত রোগী নেগেটিভ না হয় তাহলে চিন্তার কারণ নেই। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে রোগীর জটিলতা অনেকটা কমে যায়। একসময় রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।

হেপাটাইটিস বি হলে কি খাওয়া উচিত

হেপাটাইটিস বি হলে কিছু খাবার বেছে খাওয়াই ভালো। হেপাটাইটিস বি হলে আপনি মসলাযুক্ত খাবার কম করে খাবেন। বেশি করে পানি পান করবেন যেন শরীরে পানির অভাব না হয়। হেপাটাইটিস বি হলে যে সকল খাবার খেতে পারবেন তা নিচে দেওয়া হল।
  • তাজা শাকসবজি এবং ফলমূল খেতে পারেন। এ সকল খাবারের রয়েছে ফাইবার ভিটামিন এ, সি, বি৬ এবং পটাশিয়াম। কমলা, কলা, খেজুর, পালং শাক, টমেটো, ব্রকলি ইত্যাদি খেতে পারেন।
  • এ সময় শস্য দানা জাতীয় খাদ্য খেতে পারেন। কারণ এগুলো প্রচুর প্রোটিন থাকে যা আপনার মাংসপেশিকে ঠিক রাখে।
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি করে খাবেন। দই, দুধ ইত্যাদিতে ভালো প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম থাকে। প্রোটিন যুক্ত খাবার খেলে আপনার শরীর ভালো থাকবে।
  • এই রোগের সময় বেশি করে পানি পান করুন। এক্ষেত্রে কোল ড্রিংস এবং ঠান্ডা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • এ সময় শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য আখের রস, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া দরকার।
  • চিনা বাদাম, মাছ এবং চর্বিহীন খাবার গ্রহণ করুন।
উপরোক্ত খাবারগুলি হেপাটাইটিস বি হলে আপনি খেতে পারেন। তবে কোন খাবার গ্রহণের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।

হেপাটাইটিস বি হলে কি কি খাওয়া নিষেধ

হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীদের কিছু খাবার নিষেধ রয়েছে। এসব খাবার এড়িয়ে চললে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন। হেপাটাইটিস বি হলে যেসব খাবার খাওয়া নিষেধ সেগুলো নিচে দেওয়া হল।
  • তেল ও ঝাল মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • ঠান্ডা জাতীয় খাবার যেমন আইসক্রিম, ফ্রুট জুস এবং মদ থেকে দূরে থাকুন। কারণ এসব খাবারে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে।
  • দুগ্ধজাত জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন।
  • ডায়েটরি সাপ্লিমেন্ট চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করবেন না।
  • ক্রনিক হেপাটাইটিসের কারণে শরীরে আয়রন বেশি জমা হয়। তাই এ সময় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার কম খাবেন।
উপরোক্ত খাবারগুলি হেপাটাইটিস বি হলে না খাওয়াই ভালো। এতে করে আপনি এ রোগ হলে এসব খাবার বর্জনের মাধ্যমে কিছুটা সুস্থ থাকবেন।

শেষ কথা: হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ

প্রিয় পাঠক আজকের এই অনুচ্ছেদে আপনারা জানতে পারলেন হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ নাকি ছোঁয়াচে নয়। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ে আপনারা বুঝতে পেরেছেন হেপাটাইটিস বি কি ছোঁয়াচে রোগ নাকি ছোঁয়াচে নয়। এবার বি সাধারণত রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। স্পর্শ বা হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায় না। হেপাটাইটিস বি থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদী হেপাটাইটিস বি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং ঔষধ সেবন করুন। আমার পোস্টে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনার উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন। আর আপনার মূল্যবান মতামত আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। ধন্যবাদ। ২৫৭৯২

Share This Post

Next Post Next Post
No Comments
Click Here For Post A comment

Articulate Avenue privacy Policy; check your comments

comment url