ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন

 

আপনি কি জানেন ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন? আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন। আজকের এই পোষ্টটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন।
ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন
সাধারণত ঘামের কারণে আমাদের শরীরে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। তবে শরীরের বিভিন্ন অংশে দুর্গন্ধের চেয়ে বগলে বেশি দুর্গন্ধ দেখা দেয়। চলুন তাহলে জেনে নেই ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন। সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্র: ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন

ভূমিকা

শরীরের দুর্গন্ধ হলে অনেক অসস্তিবোধ এবং লজ্জায় পড়তে হয়। এমন অনেক মানুষ আছে যাদের শরীর দিয়ে এত দুর্গন্ধ বের হয় যে তাদের পাশে থাকা যায় না। বিশেষ করে ঘামের কারণে যাদের বগল দিয়ে দুর্গন্ধ বের হয় তারা নিজেরাও মানুষের সামনে যেতে লজ্জা বোধ করে। ঘামের কারণে শরীরে কোন গন্ধ হয় না। ঘামের সাথে যখন ব্যাকটেরিয়া যুক্ত হয় তখন শরীরে দুর্গন্ধ বের হয়। আমাদের সমস্ত শরীর ঘামে। বিশেষ করে যখন বগল ঘামে তখন বেশি দুর্গন্ধ ছড়ায়।

বগলে লোম থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়া সহজেই সেখানে অবস্থান করে এবং ঘামের সাথে যুক্ত হয়ে শরীরে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আপনারা যারা এই সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্যই আজকের এই পোস্টটি। আজকের এই পোস্টটিতে আমি আলোচনা করব ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন এই বিষয় নিয়ে। অনেকেই জানেন না ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন। তাদের জন্য এই পোস্টটা অনেক উপকারে দিবে। চলুন তাহলে শুরু করি ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। সমস্ত পোস্টটি করতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

ঘামের দুর্গন্ধ হওয়ার কারণ

আসলে আমাদের ঘামে কোন দুর্গন্ধ হয় না। দুর্গন্ধ ছড়ানোর প্রধান হল ব্যাকটেরিয়া। আমাদের ঘামে রয়েছে তৈলাক্ত পদার্থ যা ব্যাকটেরিয়া প্রধান খাবার। এছাড়াও বিভিন্ন ঘাম গ্রন্থি এই দুর্গন্ধ ছড়ানোর জন্য দায়ী। আমরা যদি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকি তাহলে ঘামের দুর্গন্ধ দেখা যায়। আর অপরিষ্কার থাকলে শরীরে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বেশি হয়। এর ফলে শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ দেখা দেয়। নিচে ঘামের দুর্গন্ধ হওয়ার কয়েকটি কারণ দেওয়া হল।
  • নিয়মিত সাবান দিয়ে গোসল না করলে ঘামের দুর্গন্ধ হতে পারে।
  • শাকসবজি কম খেলে এবং আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেলে ঘামের দুর্গন্ধ হতে পারে।
  • শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করার পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হলে বা গোসল না করলে ঘামে দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে।
  • শরীরে ডিউডেরান্ট বা পারফিউম ব্যবহার না করলে ঘামের দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে।
  • শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার না করলে ঘামের দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে।
  • মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি খেলে ঘামের দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে।
  • সিনথেটিক কাপড় পরিধান করলে ঘামের দুর্গন্ধ শরীরে দেখা দিতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম শরীরে ঘামের গন্ধ হওয়ার কারণগুলো। এরপর ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি কেন হয় সেটি নিয়ে নিচে আলোচনা করা হবে।

ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন

ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন এ বিষয়ে অনেকের ধারণা নেই। এখন আমরা ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। ঘাম হওয়াটা স্বাভাবিক একটা বিষয়। কেউ বেশি ঘামে আবার কেউ কম ঘামে। কিন্তু এই ঘামের কারণে যে শরীরের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় তা অনেক সময় মানুষের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দুর্গন্ধযুক্ত এই ঘাম আসলে গন্ধহীন। আমাদের ত্বকের নিচে এক বিশেষ ধরনের গ্রন্থির তৈলাক্ত ক্ষরণের কারণে শরীরের দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। আর এই ধরনের গ্রন্থিগুলোর বেশিরভাগই থাকে বগলের নিচে।

এই গ্রন্থিগুলো অনেক সক্রিয় থাকে। আমাদের শরীরের বেশিরভাগ অংশ আবৃত থাকে ইক্রাইন ঘাম গ্রন্থি দিয়ে। এছাড়াও আমাদের শরীরে আরো ঘাম গ্রন্থি রয়েছে যেগুলোকে বলা হয় অ্যাপোক্রাইন ঘাম গ্রন্থি। এসব গ্রন্থি থেকে তৈলাক্ত যৌগ বের হয়। আমরা যখন ভয়, ব্যথা, মানসিক চাপ ইত্যাদি অনুভব করি তখন এই গ্রন্থিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। ঘাম গ্রন্থি থেকে যে তৈলাক্ত যৌগ নিঃসরণ হয় তাতে কোন গন্ধ থাকে না। কিন্তু এই তৈলাক্ত যৌগগুলো হল ব্যাকটেরিয়ার খাবার। ব্যাকটেরিয়া এই তৈলাক্ত যৌগ গুলোকে ফ্যাটি এসিডে রূপান্তরিত করে। এর সাথে যুক্ত হয় গন্ধযুক্ত যৌগ।
আমাদের অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থিগুলো চিন্তা ভাবনা, আবেগ ও জীবনযাত্রার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমাদেরকে জানায়। এর ফলে গ্রন্থিগুলো গন্ধকে ত্বরান্বিত করে এবং শরীরে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। আমাদের শরীরের বগলের লোম দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। এ কারণে ঘামের কারণে বগলে বেশি দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি গুলো বয়সন্ধিকালে সক্রিয় থাকে না। এ কারণে শিশুদের শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ দেখা যায় না। শরীরে হরমোন উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে শরীরে দুর্গন্ধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ কারণে ঘামের ফলে আমাদের বগলে বেশি দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন এ বিষয়ে।

শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়

শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার কিছু উপায় রয়েছে। ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন এ সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখন এই দুর্গন্ধ কিভাবে দূর করবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করা হবে। নিচে শরীরে ঘামের গন্ধ দূর করার উপায় গুলো আলোচনা করা হলো।
  • গরম পানি দিয়ে গোসল করুন: ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে প্রতিদিন গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। গরম পানি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
  • লেবু এবং মধু ব্যবহার করুন: ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন লেবু ও মধু। একটা কাপে হালকা গরম পানি সাথে লেবু এবং মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি ঘামযুক্ত স্থানে লাগিয়ে ফেলুন। এরপর পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন। দেখবেন ঘামের দুর্গন্ধ অনেকটা দূর হয়ে গেছে। লেবু ঘাম কমাতে সাহায্য করে।
  • গরম পানির সাথে নিম ব্যবহার করুন: নিমের পাতা গন্ধ দূর করতে অনেক সাহায্য করে। গরম পানির সাথে নিমপাতা যুক্ত করে ফুটান। নিমপাতা সহ পানি দিয়ে গোসল করে ফেলুন। এটি আপনার শরীরের দুর্গন্ধ দূর করবে।
  • টি ট্রি ওয়েল ব্যবহার করুন: এইটি আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়। এরপরও অনেকে এই অয়েলটি ব্যবহার করতে পারেন। একটি স্প্রে বোতলের মধ্যে তিন ফোটা এই অয়েলটি মিশ্রিত করুন। এরপর গোসলের আগে শরীরে লাগিয়ে তারপর গোসল করুন।
  • রোজ ওয়াটার বা মিন্ট বাথ: গোসলের সময় পানিতে রোজ ওয়াটার বা পুদিনা পাতা দিয়ে গোসল করুন। দেখবেন আপনার শরীরের দুর্গন্ধ অনেকটা দূর হয়ে গেছে।
  • সুতি কাপড় পরিধান করুন: ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য সুতি কাপড় ব্যবহার করুন। সুতি কাপড় পড়লে শরীরে বাতাস লাগে এবং ঘাম কম হয়। তাই ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে নাইলন জাতীয় কাপড়ের তুলনায় সুতি কাপড় বেশি ব্যবহার করুন।
  • আর্মপিট পরিষ্কার করুন: আর্মপিট এ অনেক লোম থাকে। এই লোমের কারণে বগলে দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই নিয়মিত আপনার আর্মপিট পরিষ্কার রাখুন। এর ফলে আপনার বগলে দুর্গন্ধ কমে যাবে।
  • ভিনেগার ব্যবহার করুন: ভিনেগার ঘামের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তাই আপনি চাইলে রাতের বেলা আপনার আর্মপিটে ভিনেগার লাগিয়ে রাখুন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনি ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাবেন।
  • সালফিউরিক সমৃদ্ধ খাবার কম খাবেন: সালফিউরিক সমৃদ্ধ খাবার যেমন ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি কম পরিমাণে খাবেন। এতে করে আপনার শরীরে দুর্গন্ধ থাকবে না। এগুলোতে সাধারণত মিনারেল সালফার থাকে যা দুর্গন্ধ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
  • প্রতিদিন শসা খাওয়ার অভ্যাস করুন: শসা খেলে শরীরে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে শসা শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। আপনি নিয়মিত আপনার খাদ্য তালিকায় শসা রাখুন।
উপরোক্ত উপায় গুলো ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে। তবে যদি শরীর থেকে বেশি দুর্গন্ধ বের হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।

শেষ কথা: ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন

প্রিয় পাঠক, আজকের এই অনুচ্ছেদে আপনারা জানতে পারলেন ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন এ সম্পর্কে। আশা করছি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি বুঝতে পেরেছেন ঘামের দুর্গন্ধ বগলে বেশি হয় কেন। অতিরিক্ত ঘাম হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।
আমার পোস্ট যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং পোস্টটি পড়ে যদি আপনার উপকার হয় তাহলে অবশ্যই পোস্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন। আমাদের পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানান। ধন্যবাদ। ২৫৭৯২

Share This Post

Next Post
No Comments
Click Here For Post A comment

Articulate Avenue privacy Policy; check your comments

comment url