ভার্চুয়াল র‍্যাম কি? কিভাবে কাজ করে? সুবিধা ও অসুবিধা জানুন

ভার্চুয়াল র‍্যাম কি? কিভাবে কাজ করে? সুবিধা ও অসুবিধা জানুন

বর্তমান সময়ে র‍্যাম কি তা জানে না এমন মানুষ হয়তো খুঁজেও পাওয়া যাবে না। বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে আমাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং জ্ঞান সন্তোষজনক পর্যায়ে না গেলেও অন্তত বেসিক প্রযুক্তিগত দিকগুলো আমাদের সবারই জানা। তবে র‍্যামের ধারণাটা পুরাতন হলেও ভার্চুয়াল র‍্যামের ধারণাটা পুরোটাই নতুন। আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় ভার্চুয়াল র‍্যাম কি, কিভাবে কাজ করে, এর সুবিধা এবং অসুবিধা কি সে সম্পর্কে।



ভার্চুয়াল র‍্যামের প্রথম ব্যবহারকারী মূলত ভিভো স্মার্টফোন কোম্পানি। তারা তাদের X60 মডেলের ফোনে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল র‍্যাম ফিচারটি চালু করে। পরবর্তীতে অন্যান্য কোম্পানি যেমন রিয়েলমি, অপ্পো, ওয়ান প্লাস, শাওমি ইত্যাদি ব্র্যান্ড বিভিন্ন নামে ভার্চুয়াল র‍্যাম ফিচারটি তাদের ফোনে যুক্ত করা শুরু করে। ভার্চুয়াল র‍্যাম মূলত ডায়নামিক র‍্যাম এক্সপানশন এবং এক্সটেন্ডেড রাম ইত্যাদি নামে প্রচলিত রয়েছে।

ভার্চুয়াল র‍্যাম কি?

র‍্যাম বলতে বোঝায় রেনডম এক্সেস মেমোরি যা ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ড এপ্লিকেশন রানিং এর ক্ষেত্রে ডেটা সংরক্ষণ করে থাকে। মূলত স্মার্টফোনে র‍্যাম একটি হার্ডওয়ার হিসেবে সংযুক্ত থাকতো কিন্তু ভার্চুয়াল র‍্যাম কোন হার্ডওয়ার অংশ নয়। এটি মূলত ফোনের স্টোরেজের একটি অংশ যা র‍্যাম এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো ক্লিয়ার হবে। ধরুন আপনার একটি ৮ জিবি র‍্যামের ফোন আছে এবং সেখানে ১২৮ জিবি রম রয়েছে। সেখানে আপনি চাইলে আরো পাঁচ জিবি ভার্চুয়াল র‍্যাম ব্যবহার করতে পারবেন অর্থাৎ আপনার ফোনের র‍্যাম ৮ জিবি থেকে বেড়ে ১৩ জিবী হয়ে যাবে। 

ভার্চুয়াল র‍্যাম কিভাবে কাজ করে?

আমরা সবাই জানি স্মার্ট ফোনে মূলত দুই ধরনের মেমোরি থাকে একটি হল র‍্যাম এবং অপরটি হল রম বা ইন্টারনাল স্টোরেজ। র‍্যাম এর কাজ হল যখন ফোনে কোন অ্যাপ্লিকেশন রান করবে তখন সে এপ্লিকেশনের ডাটা সাময়িকভাবে সংরক্ষণ করা বং যখন অ্যাপ্লিকেশনটি বন্ধ করা হবে তখন সে ডাটাটা অটোমেটিক্যালি র‌্যাম থেকে মুছে যাবে। কিন্তু রম এর কাজ হল কোন ডেটাকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা অর্থাৎ র‍্যাম হল টেম্পোরারি মেমরি এবং রম হলো পার্মানেন্ট মেমরি। 

কিন্তু বর্তমানে স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো তাদের ফোনে নতুন একটি ফিচার ভার্চুয়াল  র‍্যাম সংযুক্ত করা শুরু করেছে। ভার্চুয়াল র‍্যাম মূলত একটি ইন্টারনাল স্টোরেজের অংশ যেটি র‍্যামের এর মত করে কাজ করে। অর্থাৎ আপনার ফোনে যদি ১২৮ জিবি ইন্টার্নাল স্টোরেজ থাকে তাহলে সেখান থেকে ৫ জিবি স্টোরেজকে চাইলে আপনি র‍্যাম হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। ধরুন আপনার ফোনে অতিরিক্ত অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল থাকার কারণে আপনার র‍্যাম ফুল হয়ে গিয়েছে অতিরিক্ত 5 জিবি র‍্যাম আপনার ফোনকে বুস্ট করতে সাহায্য করবে। 

অর্থাৎ ভার্চুয়াল র‍্যাম এর কাজ হল যখন আপনার র‍্যাম ফুল হয়ে যাবে তখন ভার্চুয়াল র‍্যাম অতিরিক্ত কিছু স্টোরেজ প্রদান করার মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন গুলা স্মুথ ভাবে চলতে সাহায্য করবে। 

এবার চলুন জেনে নেয়া যাক ভার্চুয়াল রেম র‍্যাম কিভাবে আমাদের ফোনের র‍্যাম  এর স্পেস বাড়ায়

ভার্চুয়াল র‍্যামের ব্যবহার 

উদাহরণস্বরূপ ধরে নিন আপনার ফোনে একসাথে দশটি অ্যাপ রানিং আছে যার কারণে আপনার ফোনের র‍্যামের সম্পূর্ণ স্পেস ব্লক হয়ে আছে যার কারণে আপনি নতুন কোন অ্যাপ আর ওপেন করতে পারছেন না, যদি ওপেন করতে যান তাহলে অন্য একটি অ্যাপ ক্লোজ হয়ে যাবে এটি বর্তমানে আমরা যারা ফোনের মাধ্যমে মাল্টি টাস্কিং করে থাকি তাদের ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি সমস্যা।

 মূলত এই সমস্যাটা সমাধানের লক্ষেই ভার্চুয়াল র‍্যামের উৎপত্তি। আপনার র‍্যামের নির্ধারিত স্পেস ছাড়াও বাড়তি স্পেস প্রদানের মাধ্যমে ভার্চুয়াল র‍্যাম আপনাকে একই সাথে অনেকগুলা অ্যাপ ব্রাউজিং সহ ব্যাকগ্রাউন্ডে একাধিক অ্যাপ কে সচল রাখতে সাহায্য করে। এখানে আপনার ফোন অটোমেটিক্যালি ইমপোর্টেন্ট অ্যাপ গুলোকে ফোনের মূল র‍্যামেরাখবে এবং যেগুলো একটু কম গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোকে স্থানান্তরিত করে আপনার ফোনের overal performance বৃদ্ধি করবে।

প্রত্যেকটা সিস্টেমেরই কিছু ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে ভার্চুয়াল র‍্যাম ও তার বাইরে নয়। এবার চলুন জেনে নেয়া যাক ভার্চুয়াল র‍্যাম এর কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে। 

র‍্যামের সুবিধা কি?

বর্তমানে আধুনিক ফিচার যুক্ত ফোনগুলোতে আপনার ফোনের র‍্যামের বাইরেও একটি ভার্চুয়াল র‍্যাম ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ভার্চুয়াল র‍্যাম মূলত আপনার ফোনের ইন্টার্নাল স্টোরেজের কিছু অংশ ব্যবহার করে এবং সেটিকে র‍্যাম এর মতো করে ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করে। ভার্চুয়াল র‍্যাম  ব্যবহার করে আপনি ফোনের নির্ধারিত র‍্যাম স্পেস এর চাইতে কিছু অতিরিক্ত স্পেস পাবেন যার দ্বারা আপনি একসাথে অনেকগুলো এ্যাপ ওপেন করতে এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু রাখতে পারবেন। 

ভার্চুয়াল র‍্যাম ফোনের ফিজিক্যাল র‍্যামের এর জায়গা বাঁচাতে সাহায্য করবে এবং যার কারণে ফোন তুলনামূলক ফাস্ট হবে। প্রথমবার এই ভার্চুয়াল র‍্যাম অপশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সেটিংস থেকে ভার্চুয়াল র‍্যাম অপশনটি অন করে ফোন রিস্টার্ট করতে হবে। 

ভার্চুয়াল র‍্যামের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এর জন্য আপনাকে আলাদা করে কোন খরচ করতে হবে না। অনেকে ভার্চুয়াল র‍্যাম বলতে মনে করেন আপনাকে আলাদা করে র‍্যাম  কিনে ফোনে ইন্সটল করতে হবে কিন্তু আসলে বিষয়টা এমন নয়। আপনি বিনামূল্যে আপনার ফোনের সেটিংস থেকে ভার্চুয়াল র‍্যাম অপশনটি অন করে খুব সহজেই এই সুবিধাটি নিতে পারবেন। 

তবে ভার্চুয়াল র‍্যাম ফিচারটি ব্যবহারের জন্য আপনার ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাঁকা থাকতে হবে। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখবেন অবশ্যই ফিজিক্যাল র‍্যাম এর পারফরম্যান্স ভার্চুয়াল র‍্যাম এর চেয়ে স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে। স্পিডের দিক দিয়েও ফিজিক্যাল রাম ভার্চুয়াল রেম এর থেকে এগিয়ে থাকবে। ভার্চুয়াল র‍্যাম ব্যবহারের একটি অসুবিধা হল আপনাকে ফোনের ইন্টার্নাল স্টোরেজ বেশি পরিমাণে ফাঁকা রাখতে হবে যার কারণে আপনি অডিও ভিডিও ছবি ইত্যাদি কম সংরক্ষণ করতে পারবেন।

ভার্চুয়াল র‍্যামের অসুবিধা কি?

কিছু সুবিধা পাশাপাশি ভার্চুয়াল র‍্যাম এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম হলো ভার্চুয়াল র‍্যাম কে কখনোই ফোনের প্রাইমারি র‍্যাম এর মত করে ব্যবহার করতে পারবেন না। এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে যেমন স্পিড, পারফরমেন্স কখনোই ফোনের প্রাইমারি র‍্যাম এর মত হবে না। 

ভার্চুয়াল র‍্যাম কে আপনি গুগল ড্রাইভের সাথে তুলনা করতে পারেন। ভার্চুয়াল র‍্যাম  এর ধারণা অনেক আগে সামনে আসলেও কিছু সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে এটিকে বাজারে আনা হয়েছিল না তবে বর্তমানে ফাইভ জি প্রযুক্তির কল্যাণে ভার্চুয়াল রেম সিস্টেম টিম বাজারে আসতে শুরু করেছে।

ভার্চুয়াল র‍্যাম ব্যবহার করতে হলে যেহেতু আপনাকে ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ বেশি পরিমাণে ফাঁকা রাখতে হচ্ছে তাই আপনি আপনার ফোনে খুব বেশি পরিমাণ ডাটা সংরক্ষণ করতে পারবেন না যেটি অনেকের কাছে একটি বড় সমস্যার কারণ। 

এন্ড্রয়েড ফোনে কি র‍্যাম বাড়ানো যায়?

বর্তমানে অনেককে প্রশ্ন করতে শোনা যায় যে আসলে কি এন্ড্রয়েড ফোনের র‍্যাম  বাড়ানো যায়? এবং অনেক ক্ষেত্রে শোনা যায় অনেকে 2gb র‍্যাম এর ফোনকে 4gb করে ফেলেছেন। মূলত এই ভার্চুয়াল র‍্যাম  ধারণাটা ব্যবহার করেই ফোনের র‍্যাম বাড়ানো হয়। এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য ফোন রুট করা হয় বা র‍্যাম  এক্সপেন্ডার এর মত কিছু অ্যাপ ব্যবহার করা হয় যেটি ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেস কে র‍্যামে কনভার্ট করে। 

ভার্চুয়াল র‍্যাম  কি আসলেও ফোনের স্পিড বৃদ্ধি করে?

এক কথায় উত্তর হলো না, আপনার ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ কখনোই র‌্যামের মত সুবিধা প্রদান করতে পারবেনা, যেহেতু এখানে ইন্টার্নাল স্টোরেজকে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কনভার্ট করা হয় সেক্ষেত্রে সহজভাবেই বোঝা যাচ্ছে এখানে পারফরম্যান্স র‍্যামের মতো অতটা স্মুথ হবে না। এবং তার চাইতে বড় কথা একই সাথে দুই প্রকারের র‍্যাম ব্যবহারের ফলে ফোনের পারফরম্যান্স বৃদ্ধি না হয়ে বরং ফোন ব্যবহারে অসুবিধা দেখা দিতে পারে। 

র‍্যাম মূলত বিভিন্ন ইনফরমেশন রিড এবং রাইট করে থাকে এই প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত সম্পন্ন হবে ফোন ততটা স্পিডে চলবে। যেহেতু ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজকে র‍্যাম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয়নি তাই কেউ যদি সেটাকে র‍্যাম হিসেবে ব্যবহার করতে যায় তাহলে ইন্টার্নাল স্টোরেজের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে সে ক্ষেত্রে দ্রুত ইন্টারনাল স্টোরেজ সিস্টেমটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

পরিশেষে বলা যায় ভার্চুয়াল র‍্যাম আপনাকে কিছু সাময়িক সুবিধা প্রদান করলেও এটি ব্যবহারের ফলে আপনার স্মার্টফোনটি খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই সে ক্ষেত্রে আপনার যদি অতিরিক্ত র‍্যামের প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে একটি নতুন ফোন কেনাই ভালো। 

ফোন আপডেট দিলে কি র‌্যাম বৃদ্ধি পায়?

ফোন আপডেট দিলেই যে র‍্যাম বৃদ্ধি পাবে এই ধারণাটি সব ক্ষেত্রে সত্য নয়। তবে যদি আপনার ফোন কোম্পানি তাদের আপডেটের মাধ্যমে ভার্চুয়াল র‍্যাম ফিচারটি দিয়ে থাকে তাহলে আপডেট দিলে আপনার ফোনের র‍্যাম বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আপনার ফোনের র‍্যাম বৃদ্ধি করা সম্ভব কিনা সেটা ফোন কেনার আগে অবশ্যই শোরুম থেকে জেনে নিবেন। 

শেষ কথা

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের বিভিন্ন ফিচার বর্তমানে আমাদের জীবন যাপনকে অনেক সহজ করে তুলেছে। কিন্তু যদি আমাদের ফোনের র‍্যাম কম হয় সে ক্ষেত্রে আমরা মাল্টিটাস্কিং সহ একসাথে বেশি অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে একসাথে সচল রাখতে পারি না। এবং অন্যদিকে এক এক থেকে অন্য অ্যাপে সুইচ করাও সমস্যা হয়ে যায়। এসব সমস্যা সমাধানে ভার্চুয়াল র‍্যাম কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারে। 

ভার্চুয়াল র‍্যাম যেহেতু র‍্যাম এর ব্যাকআপ হিসেবে কাজ করে তাই আমরা কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকি। একসাথে অনেকগুলো অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ড এ সচল রাখা, মাল্টিটাস্কিং, অ্যাপ সুইচিং ইত্যাদি কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যায় এবং ফোনের অ্যাপ গুলো দ্রুত লোড নেয়।

তবে স্মার্টফোনগুলো এখনো পুরোপুরি ভার্চুয়াল র‍্যাম এর আওতায় আসেনি, আশা করা যায় আগামী কিছুদিনের মধ্যে আমরা ভার্চুয়াল র‍্যাম এর সুবিধা টি ব্যাপকভাবে স্মার্টফোনে দেখতে পাবো।

Share This Post

Next Post Next Post
No Comments
Click Here For Post A comment

Articulate Avenue privacy Policy; check your comments

comment url