সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার দাম ও আবেদন যোগ্যতা কি জানুন

সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার দাম ও আবেদন যোগ্যতা কি? 

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে সৌদি আরবে কি ফ্রি ভিসা আছে থাকলেও এর দাম কত বেতন কত কি কি সুবিধা রয়েছে কোন কোন কাজ করতে পারবেন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে চান। যদি এ ব্যাপার গুলোতে সম্পূর্ণ ধারণা পেতে চান তাহলে আজকের ব্লগটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন আশা করি সৌদি আরবের ফ্রি ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।


দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে বর্তমানে ভিসা এবং পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে দালালের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে এবং যার মধ্যে ম্যাক্সিমামই প্রতারক চক্রের সাথে জড়িত। তাই ভিসা এবং পাসপোর্ট সম্পর্কে আপনার যদি স্বচ্ছ ধারণা না থাকে তাহলে এসব চক্রের দ্বারা প্রতারিত হওয়া যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

বিদেশ যাবার ক্ষেত্রে আপনি যে কোন দেশেই যান না কেন আপনার ভিসা এবং পাসপোর্ট যদি ঠিক না থাকে তাহলে কোনভাবেই আপনি ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন না। এমনকি বাংলাদেশ থেকে সেই দেশে যাওয়া আপনার জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।

সৌদি আরবে বর্তমানে কোন কোন ভিসা পাওয়া যায়?

সারা বিশ্বের মতো সৌদি আরবেও বিভিন্ন প্রকার ভিসায় কাজ করার সুযোগ রয়েছে তবে সেগুলো সংখ্যা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটু সীমিত। এগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
  • শিক্ষা ভিসা
  • সৌদি আরব হজের ভিসা
  • সৌদি আরবের কাজের ভিসা
  • টুরিস্ট ভিসা
  • ফ্যামিলি ভিসা

সৌদি আরবের কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি?

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগই সৌদি আরবকেই বেছে নিচ্ছে। কারণ তাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে প্রবাসী শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়। তবে সৌদি আরবের নতুন ভীষণ ২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদের অর্থনীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং সেখানে প্রচুর পরিমাণে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে তাই এই বিপুল পরিমাণ শ্রমিকের চাহিদা মেটাতে তারা বাইরের দেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে।

তো যারা সৌদি আরবে বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান তাদের জানা উচিত সৌদি আরবে কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আপনি যদি সঠিকভাবে আপনার কাজ বাছাই করতে না পারেন সে ক্ষেত্রে সৌদি আরবে আপনি আপনার কাজ খুঁজে নাও পেতে পারেন সেই কাজের জন্য আবেদন করা বুদ্ধিমান এর কাজ।

সৌদি আরবে চাহিদা সম্পন্ন কাজের নাম 

  • ইলেকট্রিশিয়ান
  • প্লাম্বার শ্রমিক
  • ওয়েল্ডিং এর কাজ
  • কনস্ট্রাকশনের কাজ
  • রংয়ের কাজ
  • বিভিন্ন প্রকার সার্ভিসিং যেমন অটোমোবাইল এবং এসি

সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার দাম কত? 

সৌদি আরবের যে ফ্রি ভিসা রয়েছে আমাদের মধ্যে অনেকেই তা জানেন না। আবার অনেকে বিস্তারিত না জেনে দালাল চক্রের দ্বারা এই ফ্রি ভিসায় আবেদন করতে চেয়ে প্রতারিত হন। তাই তাদের কাছে না হতে চাইলে এই অংশটা মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

 সৌদি আরবের ফ্রি ভিসা বলতে আসলে এমন ভিসা কে বোঝানো হয় যেই ভিসার মাধ্যমে আপনি যদি সৌদি আরবে যান তাহলে আপনার ইচ্ছামত যে কোন কাজ করতে পারবেন তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই একটি কফিলের আন্ডারে যেতে হবে এবং সেই কপিলকে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ কিছু টাকা প্রদান করতে হবে। 

 মূলত ফ্রি ভিসা বলতে এটাকেই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওভাবে সরাসরি সৌদি আরবে ফ্রি ভিসা বলতে কোন ভিসা নেই আপনি যে বিষয়ে সৌদি আরবে যেতে চান না কেন অবশ্যই আপনাকে কফিলের আন্ডারে যেতে হবে। এবং সৌদি আরবে যাবার পর আপনাকে কিছু টাকা দিয়ে একটি ইকামত তৈরি করে নিতে হবে। সৌদি আরবে বিভিন্ন প্রকার ভিসার ক্ষেত্রে একামার খরচ সাধারণত ৯ হাজার থেকে ১৫ হাজার রিয়াল এর মধ্যে হয়ে থাকে এবং মেয়াদ সাধারণত ১ বছর হয়ে থাকে তবে আপনি চাইলে সর্বনিম্ন তিন মাসেরও করতে পারেন। আশা করি সৌদি আরবের ভিসা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেয়েছেন।

এবার চলুন জেনে নেয়া যাক সৌদি আরবের ভিসা পেতে কত টাকা খরচ হতে পারে।

সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার দাম কত? 

সৌদি আরবের ফ্রি ভিসায় যেহেতু অনেক সুবিধা রয়েছে তাই এই ভিসার দাম ও অন্যান্য ভিসার তুলনায় কিছুটা বেশি। আপনি যদি সৌদি আরবের ফ্রি ভিসা পেতে চান তাহলে আপনাকে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় চার লক্ষ থেকে ছয় লক্ষ টাকা খরচ করতে হতে পারে। তবে বিভিন্ন কারণে এই খরচের পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে আপনাকে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে। অনেকেই আবার মনে করেন ফ্রি হিসাব পেতে কোন টাকা লাগে না আসলে বিষয়টা এমন নয় ফ্রি ভিসা বলতে আপনি ওখানে গিয়ে পছন্দমত কাজ বাসায় সুযোগ পাবেন এটাকেই আসলে ফ্রি ভিসা বলা হয়।

সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার আবেদনের নিয়ম

  • ধাপ-১ঃ সৌদি আরবের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে সৌদি আরবের অফিসিয়াল ভিসা ওয়েবসাইট কে এস এ ভিসা ওয়েব সাইটে ঢুকতে হবে। আপনি গুগলে যে কে এস এ ভিসা লিখে সার্চ করলেই ওয়েবসাইটটি পেয়ে যাবেন।
  • ধাপ 2ঃ ওয়েব সাইটে প্রবেশ করার পর আপনার প্রথম কাজ হবে নিজ নামে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করা। প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টটি সহজেই আপনার মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই তৈরি করতে পারবেন।
  • ধাপ-৩ঃ ওয়েব সাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পর হোমপেজ থেকে একটি বক্স দেখতে পাবেন সেখান থেকে আপনি ভিসার ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে নিন যেমন আপনি যদি ওয়ার্ক ভিসায় যেতে চান তাহলে ওয়ার্ক সিলেক্ট করে নিন।
  • ধাপ-৪ঃ যেহেতু ভিসার ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে আপনার নির্ধারিত ক্যাটাগরি সিলেক্ট করতে হবে। এরপর ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে আবেদন সংগ্রহ করুন।
  • ধাপ-৫ঃ আবেদন ফরম টি সংগ্রহ করার পর সঠিকভাবে সেটি পূরণ করুন।
  • ধাপ ৬ঃ আবেদন ফরমটি পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সঠিকভাবে সংগ্রহ করার পর( কি কি ডকুমেন্ট লাগবে তার নিচে বিস্তারিত বলা আছে) ভিসার জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করুন।
  • ধাপ ৭ঃ আপনার আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে যদি সন্তুষ্ট হয় সেক্ষেত্রে আপনার আবেদনটি গ্রহণ করবে এবং আপনার ভিসা পারমিট করবে সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ প্রসেসিং শেষ হতে আনুমানিক এর থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে।

সৌদি আরবের ফ্রি ভিসা পেতে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে?

উপরের আলোচনা থেকে আশা করি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন ফ্রি ভিসা বলতে আসলে কি বোঝায়। এ পর্যায়ে চলুন আপনাদেরকে জানিয়ে দিই সৌদি আরবের ভিসা পেতে কি কি ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়।
  1. ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ
  2. জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি কার্ড
  3. বাংলাদেশের একটি বৈধ পাসপোর্ট যার মেয়াদ সর্বনিম্ন এক বছর
  4. মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট
  5. পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট
  6. আপনার নির্ধারিত কাজের সার্টিফিকেট
  7. আপনি যে কাজের ভিসার আবেদন করেছেন সেই কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট
  8. করোনার ভ্যাকসিনেশন কার্ড
  9. এবং অন্যান্য কাগজপত্র যদি প্রয়োজন হয়
  10. এবং আপনার বয়স সর্বনিম্ন ২১ বছর হতে হবে
আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানার পর আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে আপনি আবেদন করবেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে ফ্রি ভিসার বেতন কত। চলুন এ পর্যায়ে আমরা সৌদি আরবে ফ্রি ভিসার বেতন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

সৌদি আরবের ফ্রি ভিসার বেতন কত?

ফ্রি ভিসা বলতে যেহেতু আলাদা কোন ভিসা নেই সে ক্ষেত্রে আপনি ফ্রি ভিসাতে সৌদি আরবে গিয়ে কোন কাজ করবেন তার উপরে আপনার বেতন নির্ভর করবে। এছাড়াও আপনার কাজের দক্ষতা এবং যোগ্যতার উপরে আপনার বেতন নির্ধারিত হবে। তাই যদি ফ্রি ভিসায় সৌদি আরবে যেতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। অবশ্য বেতনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা একটি বড় বিষয় একই কাজের বেতন একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে যে তুলনামূলক বেশি অভিজ্ঞ এবং তার কাজে যত বেশি পারো বেশি পারদর্শী তার বেতন তত বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক।

তবে একটি উদাহরণ দিলে আপনার ধারণা ক্লিয়ার হবে আশা করি মনে করেন আপনি কনস্ট্রাকশন বা ইলেকট্রিশিয়ান এর কাজ করতে চান সৌদি আরবে গিয়ে সে ক্ষেত্রে আপনার বেতন আনুমানিক ৭০ হাজার থেকে এক লক্ষ বিশ হাজার বাংলাদেশী টাকা হতে পারে। অন্যদিকে আপনি যদি ড্রাইভিং বা অন্যান্য আপনি প্রতি মাসে অন্তত বাংলাদেশী টাকায় ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা অনায়াসেই ইনকাম করতে পারবেন। তবে এই ভিসার বেতন আসলে কত সেটা নির্ধারণ করা যাবে না কারণ এটা আপনার পছন্দের কাজের উপরে নির্ভর করবে তবে আনুমানিক আপনার বেতন ৬০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা হবে এটা বলা যায়।

আমাদের শেষ কথা

আমরা সকলেই জানি বর্তমানে আমাদের জনসংখ্যা তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কম তাই আমাদের তরুণ প্রজন্ম প্রবাসে যাওয়ার কথা স্বাভাবিকভাবে বেশি চিন্তা করে। তাই ভিসা আবেদন আবেদনের যোগ্যতা খরচ এবং অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি আশা করি আর্টিকেলটি যদি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ফ্রি ভিসা সম্পর্কে আপনার মনে আর কোন প্রশ্ন থাকার কথা না। আর শেষে বলে যেতে চাই সেটা হল অবশ্যই অতিরিক্ত লাভ করতে যেয়ে এই ধরনের ভিসা নেয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ এই ধরনের বিষয় সৌদি আরবে গিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন তবে এক্ষেত্রে কাজের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

Share This Post

Next Post Next Post
No Comments
Click Here For Post A comment

Articulate Avenue privacy Policy; check your comments

comment url