কিভাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায়?

কিভাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায়?

কিভাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া যায়? 

স্বাস্থ্যই সুখের মূল এই প্রবাদ বাক্যের সাথে আমরা সকলেই কম বেশি পরিচিত। তবে স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করলেও আমরা কিভাবে একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায় সে ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণে এবং সে বিষয়ে সচেতন না থাকার কারনে বিভিন্ন রোগ বালাই এর স্বীকার হই। আজকের আর্টিকেলে আমরা কিভাবে সুস্থ থাকতে পারি সে বিষয়ে আলোচনা করবো।চলুন প্রথমেই জেনে নেয়া যাক সুস্বাস্থ্য বলতে আসলে কি বোঝায়?

সুস্বাস্থ্য কি?

সুস্বাস্থ্য বলতে আমরা সাধারণত মোটাসোটা শরীর বা রোগ বালাই কম হয় এমন শরীর কে বুঝে থাকি তবে এই ধারণা সঠিক নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সুস্বাস্থ্য বলতে শুধু শারিরীক সুস্থতা নয় বরং মানষিক ও আত্নীক সুস্থতার প্রতিও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থাৎ একজন মানুষকে তখনি পরিপূর্ণ সুস্থ বলা যাবে যখন তিনি শারিরীক সুস্থতার পাশাপাশী মানষিকভাবেও সুস্থ থাকবেন। 

সুস্বাস্থ্য কি সেটা তো  জেনেই গেলেন  এবার চলুন জেনে নেয়া যাক শারীরিক ও মানষিকভাবে সুস্থ থাকার উপায়।

শারীরিক ও মানষিকভাবে সুস্থ থাকার উপায়

প্রথমেই আসা যাক শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় সম্পর্কে।

শারিরীকভাবে আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে নিচে বর্ণিত উপায়গুলোকে অনুসরণ করতে পারেনঃ

শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় 

১। নিজের উচ্চতার সাথে ওজনের সামঞ্জস্য রাখুন। যদি আপনার শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজনের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিতে পারে। 

২। নিয়মিত ব্যায়াম করুন: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারী থেকে ভারী শারিরীক পরিশ্রম যেমন দ্রূত হাঁটা বা সাঁতার কাটা ইত্যাদি। বিশেষ করে এমন ব্যায়াম যা শরীরের মূল পেশিগুলোতে প্রভাব ফেলে। 


৩. নিয়মিত  সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান: অ্যাান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেগুলো মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে সেসব খাবারে নজর দিন। এসব দিক বিবেচনা করলে ফল,শাকসবজী,মাছ ইত্যাদি ভালো উৎস হতে পারে। 

৫. দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুনঃ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন অন্যান্য ক্ষতিকর প্রভাব বাড়িয়ে দেয় ফলে আপনিন অসুস্থ হতে পারেন। এছাড়া মানষিক চাপ উচ্চরক্তচাপ বাড়ায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই সুস্থ থাকতে হলে মানষিক চাপমুক্ত জীবন যাপনের চেষ্টা করুন। 

৬. পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম ও বিশ্রাম ম্নিশ্চিত করুন: পর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীরকে একটিভ করে তোলে এবং মানষিক চাপ কমায়। এছাড়াও স্মৃতিশক্তি বাড়ানো ও ঘুমের ক্ষেত্রে ঘুমের বিকল্প নেই তাই দিনে অন্তত ৮ ঘন্টা ঘুমান। 

আরো পড়ুনঃ খেলাধূলার উপকারীতা 


মানষিকভাবে সুস্থ থাকার উপায়

১। মেডিটেশনঃ নিয়মিত কিছু সময় মেডিটেশনের অভ্যাস গড়ে তুলুন এটি আপনাকে স্থীর রাখবে,মানষিক চাপ কমাবে এবং নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সাহায্য করবে। 


২। সম্পর্কের উপর গুরুত্ব দিনঃ নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্নীয় স্বজন দের ওপর গুরুত্ব দিন। একটি সুসম্পর্ক আপনাকে মানষিকভাবে সুস্থ রাখতে অনেকভাবেই সাহায্য করতে পারে। 

৩। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনুনঃ অতিরিক্ত পরিমানে সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দেয়ার কারনে আমাদের মানষিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে এছাড়াও স্ক্রিনটাইম বেশি হলে শারিরিকভাবেও এর খারাপ প্রভাব রয়েছে। তাই স্ক্রিনটাইমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনুন। 

৪। রুটিন অনুযায়ী জীবনযাপন করুনঃ একটি সুস্থ জীবনযাপন করার ক্ষেত্রে রুটিন অনুযায়ী চলাফেরা করা উচিৎ। 


৫। এলকোহল ও মাদক পরিহার করুনঃ অনেকেই বিভিন্ন কারণে হতাশ হয়ে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন তবে এগুলো কোনোভাবেই আপনাকে মানষিকভাবে শান্তি দেবে না বরং আরো হতাশায় নিমজ্জিত হবেন। এলকোহল গ্রহণ করলে শরীরে থায়ামিনের অভাব দেখা দেয় যার কারণে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মনোযোগে ব্যাঘাত, চোখের সমস্যা ইত্যাদি রোগ হতে পারে। 

স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার 

সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে নিয়মমাফিক জীবনযাপন, ভেজাল মুক্ত খাবার গ্রহনের গুরুত্ব অসীম। আমাদের বর্তমানে প্রক্তিয়াজাত খাবার অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই আমাদের উচিৎ সঠিক খাদ্যতালীকা প্রস্তুত করা এবং সে অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা।

কোনো নির্দিষ্ট খাবার গ্রহনের মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব নয় তাই খাদ্যতালীকায় ভিটামিন, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদির চাহিদা পূরন করে এমন খাবার খাওয়া উচিৎ।

 

কার্বোহাইড্রেট: কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণ করার জন্য আমরা সাধারনত ভাত খাই।তবে ভাতের মধ্যে খুবই সামান্য পরিমানে পুষ্টিগুন থাকে। অন্যদিকে ভাত খাওয়ার পরিমাণ বেশি হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় । সেক্ষেত্রে ভাতের পরিবর্তে রুটি খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। কারণ আটার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি-৬ বা পাইরিডক্সিন। এটি প্লীহা ও থাইমাস গ্রন্থির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 


শাকসবজি:  একই সাথে ভিটামিন,মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর অভাব পূরণ করতে চাইলে শাকসবজী আপনার জন্য সেরা উপায় হতে পারে। এছাড়াও টাটকা সবজি তে ফলিক এসিডের উপস্থিতিও রয়েছে। ক্যারোটিনয়েড যুক্ত শাক সবজির মধ্যে রয়েছে টমেটো, গাজর, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত শাকসবজি গ্রহণ করুন। 


ফলমূল: ভিটামিন সি যুক্ত ফল যেমন কমলা, মাল্টা, আমড়া, লেবু ইত্যাদি টক যাতীয় ফল ইত্যাদি মিনারেলের ভালো উৎস তাই পরিমিত পরিমানে ফল গ্রহণ জরুরি।


এছাড়াও কিছু প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান যেমন রসুন, কালিজিরা, আদা ইত্যাদি ইমিউন সিস্টেম তথা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শুধু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর খাবার খেলেই হবেনা অন্যদিকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে এমন খাবার যেমন জাঙ্ক ফুড, প্রসেসড ফুড, সফট ড্রিংকস,চিনি ইত্যাদি খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকতে হবে।

শেষ কথা

সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া আমাদের সবারই প্রাথমিক লক্ষ্য থাকা উচিৎ কেননা স্বাস্থই সকল সুখের মূল। তবে আমরা অনেকেই কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করার কারণে নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল থাকি না যার কারণে বিভিন্ন রোগ বালাই এর স্বীকার হই। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে একটা সময় অনেক জটিল রোগের সৃষ্টি হয় এবং একটা পর্যায়ে মৃত্যু অবদি পৌঁছায়। অথচ আমরা চাইলেই সতর্কতা অবলম্বন করে রোগ নিজে সুস্থ থাকতে এবং আমাদের পরিবারকে সুস্থ রাখতে পারি।

শেষমেষ একটাই উপদেশ থাকবে সবাই নিজের যত্ন নেবেন।

Share This Post

Next Post Next Post
No Comments
Click Here For Post A comment

Articulate Avenue privacy Policy; check your comments

comment url