খেলাধুলার উপকারিতা- সুস্থ দেহ সুন্দর মন
খেলাধুলার উপকারিতা
খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা কি কি?
খেলাধুলা অনেক কারণে আমাদের জীবনে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে, যা আসলে কয়েক লাইনে লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। খেলাধুলা কেন ঘনিষ্ঠভাবে আমাদের শারীরিক ও মানষিক অবস্থার সাথে জড়িত তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ- শারীরিক স্বাস্থ্য: খেলাধুলা আমাদের গতিশীল করে, যা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে, শক্তিশালী পেশী এবং হাড় তৈরি করতে এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
- মানসিক সুস্থতা: শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এন্ডোরফিন, হরমোন নিঃসরণ করে যার মেজাজ-বুস্টিং প্রভাব রয়েছে। খেলাধুলা চাপ, উদ্বেগ এবং বিষন্নতা কমাতে এবং ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
- জীবন দক্ষতা: খেলাধুলা, দলগত কাজ যার মাধ্যমে শৃঙ্খলা এবং অধ্যবসায় এর মতো মূল্যবান বৈশিষ্ট্য আয়ত্ত করা যায়। ক্রীড়াবিদরা লক্ষ্য স্থির করতে, সেগুলি অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে এবং বিপত্তিগুলি মোকাবেলা করতে শেখে। এই দক্ষতাগুলি জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
- সামাজিক সংযোগ: দলগত খেলাধুলা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, যোগাযোগের দক্ষতা বিকাশ এবং একটি সাধারণ লক্ষ্যে অন্যদের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলার সুযোগ দেয়।
- মজা এবং উপভোগঃ খেলাধুলার একটি মজার ফ্যাক্টর ভুলে যাবেন না! খেলাধুলা মেজাজ শিথিল করার, মজা করার এবং নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার একটি দুর্দান্ত উপায় হতে পারে।
এবার আমাদের দেশে বিভিন্ন জনপ্রিয় খেলা যেমন ফুটবল, ক্রিকেট গোল্লাছুট ইত্যাদি খেলার উপকারীতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
ফুটবল খেলার উপকারীতা
- ফিটনেস মেশিন: ফুটবল আপনার সামগ্রিক ফিটনেস উন্নত করার একটি দুর্দান্ত উপায়। এর সাথে দৌড়ানো, জাম্পিং, স্প্রিন্টিং এবং কিক করা জড়িত, যা আপনার কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, স্ট্যামিনা এবং সহনশীলতা তৈরি করে এবং আপনাকে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- শক্তিশালী এবং টোনড: আপনি একজন ডিফেন্ডার, মিডফিল্ডার বা স্ট্রাইকার যাইহোন না কেন, ফুটবল খেলার সময় আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশ একটি ওয়ার্কআউট করে। ফুটবল আপনার পা, কোমর এবং শরীরকে শক্তিশালী করে, যার ফলে পেশীর শক্তি উন্নত হয়।
- সমন্বয় কেন্দ্রীয়: বল ড্রিবলিং, সুনির্দিষ্ট পাস তৈরি করা এবং প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার জন্য চমৎকার হ্যান্ড-আই সমন্বয় এবং স্নায়বিক সচেতনতা প্রয়োজন। ফুটবল এই দক্ষতাগুলিকে আরও উন্নত করে, যা আপনাকে জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে আরও সমন্বিত করে তোলে।
২। ফুটবল খেলার মানষিক উপকারীতাঃ
- তীক্ষ্ণ মন: ফুটবল একটি দ্রুতগতির খেলা যা আপনাকে চিন্তা করতে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে শেখায়। আপনাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কৌশল করতে হবে এবং সে অনুযায়ী খেলতে হবে। এই মানসিক অনুশীলন ঘনত্ব, ফোকাস, এবং জ্ঞানীয় ফাংশন উন্নত করে।
- টিম প্লেয়ার: ফুটবল হলো টিমওয়ার্ক। আপনি অন্যদের সাথে সহযোগিতা করতে, কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে এবং একটি সাধারণ লক্ষ্যের দিকে আপনার সতীর্থদের সাথে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে শিখেন। এই দক্ষতা মাঠে এবং মাঠের বাইরে মূল্যবান।
- আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিকারী: নতুন দক্ষতা আয়ত্ত করা, লক্ষ্য অর্জন করা এবং দলের সাফল্যে অবদান সবই আত্মবিশ্বাস এবং আত্মসম্মান তৈরি করে। ফুটবল একটি ইতিবাচক শারিরীক ও মানষিক বিকাশের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে।
- স্ট্রেস বুস্টার: যেকোন ধরনের ব্যায়ামের মতোই ফুটবল এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে, সেই হরমোনগুলি যা স্ট্রেস এবং উদ্বেগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গেমটি খেলা আপনার মেজাজকে উন্নত করতে এবং আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্য এবং উত্সাহিত বোধ করতে পারে।
গোল্লাছুট খেলার উপকারিতা
গোল্লাছুট আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের শিশুকালের এক জনপ্রিয় খেলা। এই খেলার জনপ্রিয়তা গ্রামকে ছাপিয়ে শহর অবদিও পৌঁছে গিয়েছে। ঢাকা, ফরিদপুর,মাদারীপুর এবং পাবনা শহ দেশের অন্যান্য বড় বড় শহরেও গোল্লাছুট সমান ভাবে জনপ্রিয়। স্কুলের মাঠে বা বাড়ির আঙ্গিনার ফাঁকা যায়গায় চোখ মেললেই শিশুদেরকে গোল্লাছুট খেলতে দেখা যায়।এই খেলার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে তারুন্যতা ফুটে ওঠে। গোল্লাছুট খেলার সময় রক্তের প্রবাহ সুষ্ঠু ভাবে হয় এবং মস্তিষ্ক ও হার্টে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় যার ফলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
গোল্লাছুট একটা দৌড়ঝাপের খেলা তাই এর মাধ্যমে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে দূষিত পদার্থ গুলো বের হয়ে যেয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে আমাদের হার্টে বিভিন্ন প্রকার রক্তনালী থাকে সেগুলোতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে গোল্লাছুট খেলা।
এছাড়াও এসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য এসব রোগের থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও ওজন নিয়ন্ত্রণেও গোল্লাছুট খেলার জুড়ি মেলা ভার।
শিশুদের জন্য খেলাধূলার উপকারীতা
বিনোদন মূলক খেলাধূলার উপকারীতা কি?
খেলাধুলা শুধু শরীরচর্চা নয় বরং উল্লেখযোগ্য বিনোদোনের মাধ্যম হসেবেও বিবেচিত হয়। সারাদিন বিভিন্ন ব্যস্ততার পরে অনেকেই খেলাধুলাকে বিনোদোনের মাধ্যম বাছাই করে থাকেন। একই সাথে বিনোদন ও শারিরীক সুস্থতার দিকে চিন্তা করলে বিনোদোনমূলক খেলাধূলার বিকল্প নেই।
বিনোদোনমূলক খেলাধূলা শরীরকে গতিশীল করে, পেশি ও হাড়কে মজবুত করে এবং ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে।
খেলাধুলার মাধ্যমে এন্ডোরফিন নামক এক প্রকার হরমোন নিঃসৃত হয় যা স্ট্রেস এবং বিষন্নতা দূর করে থাকে। এছাড়াও বিনদোনমূলক খেলা ঘুমের গুণগত মান এবং সামগ্রিক সুস্থতা নিশ্চিত করে থাকে।
বিনোদোনমূলক খেলাধূলার মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি হয়। একই টিমে খেলার সময় নিজেদের মধ্যে সমন্বয় সাধন হয় ও একই লক্ষ্যে কাজ করার পরিবেশ তৈরি হয় যা আমাদের বাস্তব জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
প্রতিদিন খেলাধুলা করলে কি হয়?
উত্তরঃ নিয়মিত খেলাধূলা করলে শরীরের রক্তচলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন ডায়াবেটিস, কোষ্টকাঠিন্য ইত্যাদির ঝুকি কমায়।
খেলাধুলা শিশুদের জন্য প্রয়োজন কেন?
উত্তরঃ শিশুদের সুস্থ স্বাভাবিক বিকাশে এবং শারিরিক গঠন মজবুত করতে খেলাধূলার বিকল্প নেই।
খেলাধুলার সময় কি কি দুর্ঘটনা হতে পারে?
উত্তরঃ খেলাধুলার উপকারীতার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে যেমনঃ ফ্র্যাকচার, হাত বা পা মচকে যাওয়া, কেটে যাওয়া ইত্যাদি।
আমাদের মধ্যে সেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ